মুভি রিভিউ
মুভিটা Download করার আগে এই রিভিউটা পড়তে পারেন
[159] - [RRR] - [2022]
কেমন ছিলো এস. এস. রাজমৌলির RRR...(?)
Story - Script - Screenplay - Making সব নিয়ে পজিটিভ ও নেগেটিভ দিকগুলো বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করবো। [সামান্য স্পয়লার থাকতে পারে আলোচানায়]
◾সাধারণ /সাদামাটা গল্পের একটি ফিল্ম, যেমনটা মূলত কমার্সিয়াল ফিল্মে হয়ে থাকে আরকি। কে, কি, কেন, কোন মোটিভ নিয়ে এগুচ্ছে তা শুরু থেকেই স্পষ্ট করে দেয়া হয়। কাইন্ড অফ স্পুন ফিডিং স্ক্রীপ্ট। এ ধরনের ফিল্মে আপনি জানেন গল্পের শেষ'টা কি! এক্ষেত্রে পরিচালকের হাতে একটিই মাত্র অপশন থাকে যে, সোজাসাপ্টা গল্পটিকে কিছু দারুন মোমেন্টের মধ্য দিয়ে নিয়ে গিয়ে গল্পের শেষটা পর্যন্ত দর্শককে স্ক্রীনে ধরে রাখা। টাফ বিষয়___ রাজমৌলি সেই কঠিন ব্যাপারটিই জয় করেছেন তার চমৎকার স্ক্রীনপ্লে লিখে আর সেটিকে সঠিকভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে।
◾এটি মূলত একশন মাশালা ফিল্ম৷ এ ধরনের ফিল্মের মূল শক্তি চরিত্রগুলোর স্ক্রীন প্রেজেন্স। এ ধরনের ফিল্ম মূলত নির্মান করা হয় সিনেমাহলে আসা দর্শকদের এন্টারটেইন করার জন্য। এক্ষেত্রে মূল উপাদান হিসেবে যেগুলো মূখ্য ভূমিকা পালন করে_____
[১] পাওয়াফুল প্রোটাগনিস্ট ওইথ এ লয়্যাল কজ।
[২] মোর পাওয়াফুল এন্টাগনিস্ট ওইথ ডেভিল আই।
[৩] ইমোশন- সেটা মানবিক, দেশভক্তি,ধর্মীয়- যেকোনো বিষয়ে হতে পারে যা দর্শককে কানেক্টেড করতে পারে।
[৪] চরিত্রগুলোর ইম্পেক্টফুল স্ক্রীন-প্রেজেন্স।
[৫] কিছু জয়ফুল মোমেন্টস্ + মূল চরিত্রের স্ট্রাগল।
[৬] পরিশেষে সঠিক ব্যক্তির জয়- তাই সে হিরো।
যাইহোক এখন ফিল্মে ফিরি_____
দুই সময়ের দু'জন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী ব্যক্তির চরিত্রকে এক করে কাল্পনিক একটি গল্প তৈরি করেছেন রাজমৌলির বাবা।
তোহ,
◾গল্পের প্লেসমেন্ট হয়, ইংরেজ শাষনের ভারতে। যেখানে একজন ইংরেজ শাষক একটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির বাচ্চা একটি মেয়েকে তুলে নিয়ে যায় আর সেই বাচ্চাটিকে বাচাতে দিল্লি পৌছায় তাদের রক্ষাকর্তা ভিম। আর এদিকে ইংরেজ সরকারের দায়িত্ববান পুলিশ অফিসার রাম এর কাদে পড়ে তাকে খুজে বের করার দায়িত্ব। সেখানে তার নিজস্ব স্বার্থও জড়িয়ে আছে।
____ তারপর খোজ-বন্ধুত্ব-লড়াই-ইংরেজ শাষক গয়ো। ফিল্ম শেষ। ফিল্ম দেখার মজাটা মূলত কিভাবে ঘটনাচক্র তার ফেজ পরিবর্তন করে তার মাঝে।
#স্ক্রীনপ্লেঃ- প্রথমার্ধ এঙ্গেজিং। গল্পের বিল্ডাপের পাশপাশি মূল দুই প্রোটাগনিস্টের গ্রেন্ড লেভেলের এন্ট্রি আকর্ষণ সৃষ্টি করে। প্রথম মিনিট থেকেই ফিল্ম তার মূল গল্পের ট্রাক ধরে ফেলে সময় ব্যয় না করে। দ্বিতীয় অংশে একটি মূল চরিত্রের মোটিভ রিভিল হয়। কিছুক্ষন চলে ফ্লাসব্যাক যে গল্পটিও আকর্ষণ সৃষ্টি করার পাশপাশি মূল গল্পের পরবর্তী মোড়ের স্পষ্টতা প্রকাশ করে।[নেগেটিভ পয়েন্টে কিছু বলবো এটা নিয়ে]
#ফিল্ম_এডিটিংঃ- টপনচ। সম্পূর্ণ লিনিয়ার এডিটিংয়ের মাধ্যমে নিয়ে গেছেন পুরো ফিল্ম। দারুন।
[বাকীটা নেগেটিভ পয়েন্টে]
#ক্যামেরা_ওয়ার্কঃ- বিস্তারিত না লিখে, বিশেষটা বলি। এক্সট্রিম কোজয়াপ শট দারুন। বিশেষ করে বাঘ আর ভিমের রোর এর দৃশ্যটি আকর্ষণীয়। পাশাপাশি রামের এন্ট্রি ফাইটে লংশটগুলো। by the way, তাদের এন্ট্রি দারুন ছিলো। বিশেষ করে ভিমের।
#কালার_প্যালেট- ডার্ক গ্রে আর ডিপ ইউলো স্যাডের সেকেন্ডারি কালার গ্রেডিং - অসাধারণ ব্যবহার।
#লাইটিংঃ- পুরো ফিল্মে জুড়েই হাই-কে লাইটিংয়ের প্রভাব লক্ষনীয় যা অব্জেটগুলো দৃষ্টি নন্দন করার কাজ করে।
#সাউন্ড_ডিজাইনস্ঃ- ট্রাক,যা গল্পের একঘেয়েমি দূর করে হঠাৎ চাঙ্গা করে তুলে। ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরিং - বেস্ট পার্ট আর এডিশনাল সাউন্ড ডিজাইনে বেশ খরচা করেছেন বুঝা যায়। বেশ ডিটেইলড কাজ।
#ভিএফএক্স_সিজিঅাইঃ- ইন্ডিয়ায় সেরা বলা যায়__? পশুদের ক্রিয়েশন ও মোশন ক্যাপ্চার কিংবা কিংবা অস্রের গোদামের দৃশ্য...(?) cgi & Vfx at It's best....
#ক্যারাক্টার_ডেভলপমেন্টঃ- চরিত্রের মোটিভ এবং তাদের লয়্যাল কজ শুরু থেকেই স্বপ্ট হয়ে উঠে৷ গল্পের মোটিভ সেট করা হয় যথাযথ সময়ে। তার মাঝে গল্পে রামায়নের রেফারেন্স এনে দর্শককে চরিত্রের সাথে সহজে কানেক্টেড করতে সক্ষম হয় ফিল্মটি।
#ডান্স_এন্ড_ফাইটিং_করিউগ্রাফিঃ- কি বলবো এখানে জানিনা। ফিল্মটির জান এগুলোই ছিলো। রাজমৌলি এ বিষয়ে দারুন দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। আর অভিনেতারাও নিজেদের উজার করে দিয়েছেন এখানে।
#অভিনয়ঃ-
জুনিয়র এন.টি.আর দারুন করেছেন (আগে পছন্দ করতাম না তাকে) আর রাম-চরন - মূলত শো কিলা*র। দর্শকের আকর্ষণের মূল কেন্দ্রে রূপান্তরিত হন। তার চরিত্রটিই এমন। তার রামরূপে আবির্ভাব -ওয়াও। অজয় দেবগন - এক্সটেন্ডেড কেমিওতে ছিলেন- ফাটিয়েছেন পুরোটা সময়। আর সীতা চরিত্রে অলিয়া ছিলেন আমার জন্য সারপ্রাইজিং প্যাক। পটেনশিয়ালিটি আছে অভিনয়ে। আচ্ছা তার চরিত্রটি গল্পের ডিমান্ড নাকি ভিন্ন কিছু..(?) [নেগেটিভ পয়েন্ট]
#ডিরেকশনঃ- এভারেজ একটি গল্পকে চমৎকার মেকিংয়ের মাধ্যমে দর্শকের আকর্ষণ কেড়েছেন। স্যালুট। গল্পটা যদি আরো ভালো হতো..(?) অমর সৃষ্টি হতে পারতো। যা আছে, তা মানুষ দেখবে, উপভোগ করবে আবার ভুলেও যাবে কিছুদিন পর।
[নেগেটিভ পয়েন্টে জানাচ্ছি বাকীটা]
◾[NEGATIVE POINTS] ◾
>>মূল এন্টাগনিস্টকে সাধারণ অত্যাচারী শাষক হিসেবে দেখানো। তাকে হাই লেভেল ভয়ংকর শাষক হিসেবে দেখানো উচিত ছিলো। তার স্ক্রীন-টাইম কম বা প্রোটাগনিস্টের সাথে ইন্ট্রাকশন নেই, ভালো ডিফেন্সও গড়ে তুলতে পারেন নি।
>>কিছু মানুষ সারাজীবন রেভুলোশনারি ফাইটের অপেক্ষায় ছিলেন। শেষ ফাইটে বন্দুক হাতে তাদের বিদ্রোহ করতে দেখা গেলে জমে যেতো শেষটা।
>>সীতা চরিত্রঃ- গুরুত্বপূর্ণ নয় গল্পের জন্য। মূলত দর্শকদের হিন্দুশাস্ত্র রামায়নের রাম-সীতা-রাভন-লংকা, হনুমানের ওয়াদা করা "সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনবো" (রামায়নে রামকে দেয়া কথা এখানে সীতাকে দেয়া)- যা বলছিলাম, এগুলোর রেফারেন্স দিয়ে ইংরেজ শাষককে রাভন ও তার প্রাসাদকে লংকা-স্বরূপ দেখানোর চেষ্টা করেছেন দর্শককে ধর্মীয় ইমোশনের মাধ্যমে শেষ ফাইটে কানেক্ট করার জন্য। আর এর জন্য সীতা থাকা চাই গল্পে। এটা ছাড়া এ চরিত্র না থাকলেও সমস্যা ছিলো না। ক্লেভার মাইন্ড অব রাজমৌলি। ভালো ব্যবহার করেছেন ছোট চরিত্রটির। ✅
>>এন্ট্রি সিনগুলো বেশ লম্বা-ট্রিম করা যেতো। দেখতে ভালো লাগলেও একঘেয়েমি ভাব এনে দেয়। ফ্লাসব্যাক স্টোরিও এতো লম্বার মানে হয়না। মূল গল্প থেকে মনোযোগ নষ্ট করে দেয়৷ ফ্লাসব্যাকের ভিতর আবার অতীতের গল্প ❎ মূল গল্পে ফিরে এসে আবার কিছুক্ষনের জন্য ফ্লাসব্যাক যাওয়াটা ঠিক হয়নি। -এগুলো ট্রিম করা উচিত ছিলো (Film editing).
>>মাত্রই সাপে কামড়ালো আর সে দ্রুত সুস্থ হয়ে মারামারিতে চলে গেলো!!! শেষে আবার রাম হাটতে পারে না কিন্তু কিছুক্ষন পড়েই রামরূপে সবাইকে লাফিয়ে লাফিয়ে মারলো!!!__ ভিম বাইক হাতে নিলো, মাশালা ফিল্ম সমস্যা নেই। কিন্তু একবারও মাটিতে না ফেলে এতোক্ষন মাইর দিলো?
>>ছোট রাম গুলি চালায়। অন্ধকার রাত, আকাশে তারা। অনেক দূর থেকে গুলি চালালো, তাও প্রথমবার। লক্ষবস্তু এতোটাই দূরে যে সেটা দেখতে পাওয়ার কথা নান কিন্তু সে মাঝ বরাবর এই অন্ধকারেই গুলি করে ফোটা করে দেয়। এটা একটু বেশিই হয়ে গেলো।
[আমি মাশালা ফিল্মে সাইন্স, আর্স,কমার্স, ফিজিক্স,রসায়ন খুজিনা। কিন্তু সাধারণ বিজ্ঞান খুজি। বেসিক সেন্স যাকে বলে। অন্ধকারে কিভাবে!]
>>তাদের বন্ধুত্বের গল্পটাও বেশ টানা হয়েছে।
ছোট করা দরকার ছিলো এই পয়েন্টটা।
>>হিন্দি সংলাপঃ-
বন্ধুকে নামের জায়গায় বারবার ভাই ভাই বলাটা কানে লাগে। "সাব কো কাট ডালোঙ্গা" সাউথ মুভির হিন্দি ইউটিউব ভার্সনে বহু ফিল্মে ব্যবহৃত পুরোনো শব্দ। এই ফিল্মেও এই জাতীয় সংলাপটি ছিলো। ভালো লাগেনি। তবে অজয়ের - লোড-এইম-শট এটা মনে রাখার মত সংলাপ। বাকি ফিল্মে সাধারণ সংলাপে ভরপুর।
>>বিজিএম মাঝে মাঝে টু লাউড ছিলো। আর গল্পটা অস্র পাওয়া পর্যন্ত না রেখে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জাতীয় বিপ্লব পর্যন্ত নিলে ভালো লাগতো বেশি। NTR এর একটি দৃশ্যে অভিনয় এভারেজ- ভাত খাওয়া। বাকিটা ফাটিয়েছেন।
>>সে সময় ইংরেজ পরিবারে, মূল কক্ষে ভারতীয়দের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিলো (সে যে-ই হোক) আর ফিল্মে এন টি আর সরাসরি ইংরেজ মেয়েটির ঘরে চলে যায়। রাজমৌলি সাহেব, এটা একটু বেশি হয়ে গেলো। বাচ্চা মেয়েটির রিটার্ন হোমের দৃশ্য রাখলে ভালো লাগতো।
>>শেষ লড়াইয়ে রাম ২০টি তীর নিয়ে যুদ্ধে নামে, কিন্তু সে ১৭টি তীর চালানোর পরও তার আরো ১১টি থেকে যায়। মেইন ভিলেনকে মারতে গিয়েও সেখানে অনেকগুলো তীর ছুড়ে। আবার সে যখন লড়াই শেষে বাড়ি ফিরে তখনও তার কাধে ১১টি তীর রয়ে যায়! কিভাবে সম্ভব!!! আর জঙ্গলে সে শ্রীরামের দূতি পাইলো কোথায় পড়ার জন্য? আর একটু আগে সে চলতেই পারতো না, আর সে কিনা এতো দ্রুত সুস্থ আর মারামারি শুরু করে দিলো লাফিয়ে লাফিয়ে...!!!
>> আর হ্যা, ইংরেজ অভিনেতাদের ইংরেজির হিন্দি ভয়েজ ওভার ভালো ছিলোনা।
যাইহোক, আর বলবো না।
ফিল্মটিকে আপনি ১০এ কত রেটিং দিবেন..(?) জানাবেন কমেন্টে।
[সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।]
~[ সাইফ ]~
ফিল্মটি সময় পেলে দেখে নিন। সময় মন্দ কাটবে না। ওয়েল মেইড ফিল্ম। যা ছিলো, উপভোগ্য ছিলো। আর যা ভুল বললাম এগুলো ছোট ছোট ভুল। ফিল্ম দেখার সময় চোখ এড়িয়ে যাবে। আমিও সিনেমাহলে দেখার সময় এসব খেয়াল করিনি। ইঞ্জয়েবল ফিল্ম। ❤️
এই পেজে ১০ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন তাহলে দেখবেন অটোমেটিক ভাবেই Download পেজে চলে যাবে পরে সেখান থেকে আপনার মুভিটি Download করে নিবেন
Your download will begin in 20 seconds
Download
0 Comments